ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার চার্জশিটে আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও তার আইনজীবী। বুধবার দুপরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু চার্জশিটে আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের নাম নেই।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জাগো নিউজকে বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারে বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম দিয়েছেন। এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৬ জনকে রেখে পাঁচজনকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া পাঁচজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা বা তাদের ব্যাপারে বাদীর কোনো আপত্তি আছে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তাদের ব্যাপারে বাদীর সঙ্গে আলাপ করে আদালতে না রাজি দেব আমরা।
শাহজাহান সাজু বলেন, ৩০ মে এ মামলার শুনানি হবে। ওই দিন আসামিসহ বাদী উপস্থিত থাকবেন। তখন আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করব। এ মামলায় ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে বাদীর দেয়া সাক্ষীর নামগুলো আছে কিনা তা দেখা হবে। আদালতে ১৬৪ ধারায় সাতজন সাক্ষীর দেয়া সাক্ষ্যে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া পাঁচজনের মধ্যে কারও নাম আছে কিনা তাও দেখা হবে। ধারা অনুযায়ী মামলাটির বিচারকাজ চলবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। সেক্ষেত্রে আমলী আদালত থেকে মামলাটি ওই ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে হবে। এরপর মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি হবে।
পিবিআইয়ের দেয়া চার্জশিটে ওসি মোয়াজ্জেমের নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালান ওসি। কিন্তু চার্জশিটে তাকে আসামি করা হয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক।
এদিকে, মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাত হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছেন। কিন্তু তাকে চার্জশিটে রাখা হয়নি। এ ঘটনায় আমি ও আমার পরিবার হতবাক হয়েছি। পিবিআইয়ের চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে না রাজি দেবেন কিনা জানতে চাইলে নোমান বলেন, আগামীকাল চার্জশিট দেখে ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।